গণশুনানির সংস্কৃতি গড়ে উঠুক

গণশুনানির সংস্কৃতি গড়ে উঠুক

প্রকাশিতঃ 09 Aug 2021

আমাদের সরকারি প্রশাসনে ও সংসদীয় বিতর্কে মাঝেমধ্যে একটা শব্দ শোনা যায়, তা হলো গণশুনানি। তবে শব্দটি যত বেশি শোনা যায়, তত বেশি তা দেখা যায় না।
গণশুনানির অর্থ হলো জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়, ঘটনা বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সাধারণ মানুষ বা ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, মতামত ইত্যাদি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে শোনা ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তার যথাসম্ভব প্রতিকার করা। কোনো কোনো অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধানও করা হয়, প্রচলিত দাপ্তরিক বা আইনি প্রক্রিয়ায় যার সমাধান হতে অনেক সময় লেগে যেত, হয়তো কোনো দিনই যার সমাধান হতো না।
গণতান্ত্রিক সমাজে গণশুনানি একটি কার্যকর প্রক্রিয়া। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান এর চেয়ে সুন্দরভাবে ও ভালোভাবে তাঁর মক্কেলদের (ক্লায়েন্ট) অভিযোগ, মতামত ও পরামর্শ শোনার আর সুযোগ পাবেন না। অবশ্য প্রতিষ্ঠানপ্রধান এ ব্যাপারে আগ্রহী হলেই শুধু গণশুনানির আয়োজন করা হয়ে থাকে। আমাদের সরকারি প্রশাসনিক সংস্কৃতিতে ‘গণশুনানি’ এখনো একটি নিয়মিত বা পরিচিত কর্মসূচি হিসেবে স্থান লাভ করেনি। কারণ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক সংস্কৃতির উত্তরাধিকার হিসেবে বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসন বা সরকারি অফিস এখনো জনবান্ধব নয়। হয়তো সারা দেশে হাতে গোনা কিছু সরকারি অফিস জনবান্ধব হতে পারে। সরকারি অফিস সাধারণ মানুষের কাজ সহজ করার পরিবর্তে অনেক সময় জটিল করে তোলে। সরকারি অফিস সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তবে সত্যের খাতিরে এ কথাও বলতে হবে, বহু সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী দিন-রাত পরিশ্রম করে মানুষের নানা সমস্যার সমাধান করে যাচ্ছেন। তাঁরা না থাকলে সরকারি প্রশাসন কি চলতে পারত?
সরকারি অফিসকে গতিশীল ও জনবান্ধব করার নানা প্রক্রিয়া রয়েছে। আমরা মনে করি তার একটি প্রক্রিয়া হলো গণশুনানি। এখানে প্রতিষ্ঠানের প্রধান সরাসরি মক্কেল বা ভোক্তার কাছ থেকে অভিযোগ বা মতামত শুনতে পারেন। তাঁদের বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানপ্রধান সমাধানমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন। যদি তিনি সমাধানে আগ্রহী হন। বছরে অন্তত একবার গণশুনানির আয়োজন করতে পারলে ভালো হয়। প্রতিবছর যদি গণশুনানির আয়োজন হয়, তাহলে একটি প্রতিষ্ঠানের অনেক অনিয়ম দূর করা সম্ভব। সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা দু-তিন বছরের বেশি কোনো প্রতিষ্ঠানে থাকেন না। ব্যতিক্রম খুবই কম। কাজেই তাঁর পক্ষে প্রতিষ্ঠানের সব সমস্যা জানা বা বোঝা সম্ভব হয় না। প্রতিষ্ঠানটির চরিত্র বুঝতে বুঝতেই তাঁর বেশ কিছু সময় চলে যায়। তাই এ ধরনের গণশুনানি তাঁকে পেছনের অনেক কিছু এক দিনেই জানতে সহায়তা করে, যেসব বিষয় তাঁর অধস্তনেরা হয়তো তাঁকে কখনো বলতেন না। গণশুনানিতে ফাইল পুটআপের কোনো প্রয়োজন নেই। চিঠি গায়েব করারও কোনো সুযোগ নেই। ইচ্ছা করে ফাইল ‘হারিয়ে যাওয়ারও’ কোনো সুযোগ নেই।
তবে গণশুনানির আয়োজন করা সহজ কাজ নয়। এটা ১০ জন সহকর্মীকে নিয়ে অফিসের সভা করা নয়। এটা পাবলিককে নিয়ে বড় আকারের সভা। সভার তারিখ, সময়, স্থান, স্থানের ধারণ ক্ষমতা, দক্ষ র্যা পোর্টিয়ার, সভা সঞ্চালনার দক্ষতা, কতজনকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া যাবে, কত পর্বে সভাটি হবে, সমাগত ব্যক্তিরা কী কী বিষয়ে কথা বলবেন, কথা বলার জন্য প্রতিজনকে কতটুকু সময় বরাদ্দ করা হবে, মাইক্রোফোনের যথাযথ ব্যবহার ইত্যাদি অনেক কিছু বিবেচনা করতে হবে। এ ধরনের সভা সুশৃঙ্খলভাবে করতে না পারলে পুরো আয়োজনটিই পণ্ড হয়ে যেতে পারে।
অন্তত এক মাস আগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গণশুনানির ঘোষণা দিলে ভালো হয়। একটা ফরম পূরণ করে আগ্রহী ব্যক্তিরা গণশুনানিতে অংশ নিতে পারেন। আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে পর পর দুই দিন গণশুনানি হতে পারে। অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা মৌখিক বক্তব্যের পাশাপাশি একটি সংক্ষিপ্ত লিখিত বক্তব্যও কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে পারেন, যার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি ভালোভাবে অনুসন্ধান করতে পারবে।
 

সংগৃহিতঃ প্রথম আলো।